সংখ্যা বা গণনার ইতিহাস প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে আধুনিক গণিত পর্যন্ত একটি দীর্ঘ এবং আকর্ষণীয় পথ পরিক্রমা করেছে।
মানুষ প্রথমে গণনা করার জন্য প্রাকৃতিক বস্তু ব্যবহার করত, যেমন পাথর, লাঠি, বা হাড়ের উপর দাগ কেটে। ট্যালি চিহ্ন (দাগ কাটা পদ্ধতি) ছিল সংখ্যা গণনার প্রাথমিক পদ্ধতি। যেমন, একটি ভেড়া একটি দাগ দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হতো。
সংখ্যা লিখতে ক্লে ট্যাবলেট ব্যবহার করা হতো। ৬০-ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি (সেক্সাজেসিমাল) আবিষ্কার হয়, যা আজও সময় (ঘণ্টা, মিনিট) এবং কোণ পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। শূন্য ধারণার অভাব ছিল, তবে একটি খালি স্থান ছেড়ে দেওয়া হতো。
হায়ারোগ্লিফিক্স ব্যবহার করে সংখ্যা লিখত। দশমিক পদ্ধতির প্রাথমিক রূপ ব্যবহার করা হতো, তবে শূন্যের ধারণা ছিল না。
ভারতীয় উপমহাদেশে সংখ্যা চিহ্নের ব্যবহার দেখা যায়, যা পরবর্তীকালে ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি তৈরি করে。
ভারতীয় গণিতবিদরা শূন্য (০) এবং দশমিক পদ্ধতি (১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা) আবিষ্কার করেন। ব্রহ্মগুপ্ত এবং আর্যভট্ট শূন্যকে একটি সংখ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। এই পদ্ধতিই পরবর্তীকালে আরবদের মাধ্যমে ইউরোপে ছড়ায় এবং আধুনিক সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি হয়ে ওঠে。
আরবরা ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতিকে গ্রহণ করে এবং ইউরোপে ছড়ায়। আল-খোয়ারিজমি নামক আরব গণিতবিদ তার বইয়ের মাধ্যমে এই সংখ্যা পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করেন। এই সময় থেকে সংখ্যাগুলো আরবি সংখ্যা নামে পরিচিতি পায়。
ইতালির গণিতবিদ ফিবোনাচি তার বই "লিবার আবাকি" (১২০২ খ্রিষ্টাব্দ) মাধ্যমে আরবি সংখ্যা পদ্ধতিকে ইউরোপে পরিচিত করেন। ইউরোপে প্রথমে সংখ্যাগুলোকে "আরবি সংখ্যা" বলা হলেও পরে এগুলো আন্তর্জাতিক সংখ্যা হিসেবে পরিচিতি পায়。
শূন্য (০) এবং দশমিক পদ্ধতি আধুনিক গণিত, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ভিত্তি হয়ে ওঠে। বাইনারি (দ্বিমিক) পদ্ধতি (০ এবং ১) কম্পিউটার বিজ্ঞানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে。
যুগ | অবদান |
---|---|
প্রাগৈতিহাসিক | ট্যালি চিহ্ন |
মেসোপটেমিয়া | ৬০-ভিত্তিক পদ্ধতি |
ভারত | শূন্য এবং দশমিক পদ্ধতি |
আরব | সংখ্যা পদ্ধতির ইউরোপে প্রচার |
ইউরোপ | আধুনিক গণিত এবং বিজ্ঞানে ব্যবহার |
বাংলা ভাষায় সংখ্যা লিখতে দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়:
সংখ্যা ছাড়া আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, এবং দৈনন্দিন জীবন অচল। গণিত, পদার্থবিদ্যা, কম্পিউটার বিজ্ঞানসহ সব ক্ষেত্রেই সংখ্যা ব্যবহার অপরিহার্য।