সংখ্যার ইতিহাস: আদি থেকে আধুনিককাল

সংখ্যা বা গণনার ইতিহাস প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে আধুনিক গণিত পর্যন্ত একটি দীর্ঘ এবং আকর্ষণীয় পথ পরিক্রমা করেছে।

history ১. প্রাগৈতিহাসিক যুগ (প্রায় ৩০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

মানুষ প্রথমে গণনা করার জন্য প্রাকৃতিক বস্তু ব্যবহার করত, যেমন পাথর, লাঠি, বা হাড়ের উপর দাগ কেটে। ট্যালি চিহ্ন (দাগ কাটা পদ্ধতি) ছিল সংখ্যা গণনার প্রাথমিক পদ্ধতি। যেমন, একটি ভেড়া একটি দাগ দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হতো。

account_balance ২. প্রাচীন সভ্যতা (প্রায় ৩,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
মেসোপটেমিয়া (বাবিলনীয় সভ্যতা)

সংখ্যা লিখতে ক্লে ট্যাবলেট ব্যবহার করা হতো। ৬০-ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি (সেক্সাজেসিমাল) আবিষ্কার হয়, যা আজও সময় (ঘণ্টা, মিনিট) এবং কোণ পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। শূন্য ধারণার অভাব ছিল, তবে একটি খালি স্থান ছেড়ে দেওয়া হতো。

প্রাচীন মিশর

হায়ারোগ্লিফিক্স ব্যবহার করে সংখ্যা লিখত। দশমিক পদ্ধতির প্রাথমিক রূপ ব্যবহার করা হতো, তবে শূন্যের ধারণা ছিল না。

ইন্ডাস ভ্যালি সভ্যতা (প্রায় ২,৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

ভারতীয় উপমহাদেশে সংখ্যা চিহ্নের ব্যবহার দেখা যায়, যা পরবর্তীকালে ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি তৈরি করে。

language ৩. ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতি (প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

ভারতীয় গণিতবিদরা শূন্য (০) এবং দশমিক পদ্ধতি (১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যা) আবিষ্কার করেন। ব্রহ্মগুপ্ত এবং আর্যভট্ট শূন্যকে একটি সংখ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। এই পদ্ধতিই পরবর্তীকালে আরবদের মাধ্যমে ইউরোপে ছড়ায় এবং আধুনিক সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি হয়ে ওঠে。

mosque ৪. আরব এবং ইসলামিক যুগ (৭ম থেকে ১৩শ শতাব্দী)

আরবরা ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতিকে গ্রহণ করে এবং ইউরোপে ছড়ায়। আল-খোয়ারিজমি নামক আরব গণিতবিদ তার বইয়ের মাধ্যমে এই সংখ্যা পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করেন। এই সময় থেকে সংখ্যাগুলো আরবি সংখ্যা নামে পরিচিতি পায়。

euro_symbol ৫. ইউরোপে সংখ্যা পদ্ধতির আগমন (১২শ শতাব্দী)

ইতালির গণিতবিদ ফিবোনাচি তার বই "লিবার আবাকি" (১২০২ খ্রিষ্টাব্দ) মাধ্যমে আরবি সংখ্যা পদ্ধতিকে ইউরোপে পরিচিত করেন। ইউরোপে প্রথমে সংখ্যাগুলোকে "আরবি সংখ্যা" বলা হলেও পরে এগুলো আন্তর্জাতিক সংখ্যা হিসেবে পরিচিতি পায়。

computer ৬. আধুনিক সংখ্যা পদ্ধতি (১৬শ শতাব্দী থেকে বর্তমান)

শূন্য (০) এবং দশমিক পদ্ধতি আধুনিক গণিত, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ভিত্তি হয়ে ওঠে। বাইনারি (দ্বিমিক) পদ্ধতি (০ এবং ১) কম্পিউটার বিজ্ঞানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে。

table_chart সংখ্যা পদ্ধতির বিকাশের মূল ধাপসমূহ
যুগ অবদান
প্রাগৈতিহাসিক ট্যালি চিহ্ন
মেসোপটেমিয়া ৬০-ভিত্তিক পদ্ধতি
ভারত শূন্য এবং দশমিক পদ্ধতি
আরব সংখ্যা পদ্ধতির ইউরোপে প্রচার
ইউরোপ আধুনিক গণিত এবং বিজ্ঞানে ব্যবহার
translate বাংলা সংখ্যা

বাংলা ভাষায় সংখ্যা লিখতে দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়:

  1. আরবি সংখ্যা: ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯
  2. বাংলা সংখ্যা: ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ (দেখতে আরবি সংখ্যার মতো, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আকৃতি ভিন্ন)
info সংখ্যার গুরুত্ব

সংখ্যা ছাড়া আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, এবং দৈনন্দিন জীবন অচল। গণিত, পদার্থবিদ্যা, কম্পিউটার বিজ্ঞানসহ সব ক্ষেত্রেই সংখ্যা ব্যবহার অপরিহার্য।